স্বাধীন-সার্বভৌম দেশটির সাংবিধানিক নাম ‘গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ’। যেখানে রাজনৈতিক শাসন ব্যবস্থায় রাষ্ট্রের সর্বময় ক্ষমতা জনগণের দ্বারা নির্বাচিত সরকারের ওপর ন্যস্ত থাকে। যেখানে সাংবিধানিকভাবে প্রতিষ্ঠিত নিয়ম ও প্রতিষ্ঠান দ্বারা ব্যক্তিস্বাধীনতা ও অধিকার সুরক্ষিত থাকার কথা। গণতন্ত্র, মানবাধিকার ও আইনের শাসনসহ জনগণের মৌলিক অধিকার রক্ষায় অনন্য ভূমিকা রাখবে। আর যে গণমাধ্যমকে গণতন্ত্রের চতুর্থ স্তম্ভ বলা হয়- তারা প্রজাতন্ত্রে সুশাসন নিশ্চিত হচ্ছে কি না তার নির্মোহ পাহারাদারের ভূমিকা পালন করবে। স্বাধীনতার ৫৩ বছরে এসে বুঝতে পেরেছি, আমরা এখনো পরাধীনতার শেকলে বন্দি, যেখানে ছাত্র-জনতার নেই কোনো বাক-স্বাধীনতা, সরকারের নেই কোনো জবাবদিহিতা এবং একপর্যায়ে এসে সরকারের আচরণ হয়ে ওঠে কর্তৃত্ববাদী, যার প্রভাব পড়ছে গোটা জাতির ওপর। ফলে বিভিন্ন চড়াই-উতরাই পার হয়ে ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মাধ্যমে বাংলাদেশে কর্তৃত্ববাদী হাসিনা সরকারের পতন হয়।
একটি সফল আন্দোলনের পর সবার চাওয়া থাকে, দেশ যেন সুন্দরভাবে এগিয়ে যায়। আমরা রাষ্ট্রের একটা সংস্কার চাই। এই সংস্কার কাজে হাত দিয়েছে বর্তমান সরকার। যে রাজনৈতিক দলই ক্ষমতায় আসুক না কেন, তাদের জনগণের প্রতি দায়বদ্ধ থাকতে হবে। রাষ্ট্রের সিস্টেম ডেভেলপমেন্ট করতে হবে। নিয়ম-নীতির মধ্যে থেকে রাষ্ট্র পরিচালনা করতে হবে।
বাংলাদেশের পরিপ্রেক্ষিতে স্বাস্থ্য, শিক্ষা এবং অর্থনৈতিক খাতকে দ্রæততম সময়ে টেকসই উন্নয়নের দিকে নিয়ে যেতে হবে। বিচার বিভাগেরও সংস্কার প্রয়োজন। নির্বাচনী ব্যবস্থার পরিবর্তন হওয়া জরুরি। মোটাদাগে সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলোর সংস্কার প্রয়োজন। গণমুখী ও মৌলিক নাগরিক সেবাগুলো নিশ্চিত হলে একটি সমৃদ্ধ দেশ হবে আমাদের। একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবে, দ্রæততম সময়ে এ বিষয়গুলোর দৃশ্যমান পরিবর্তন দেখতে চাই। প্রতিটি ক্ষেত্রে যদি আমরা স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করতে পারি, তাহলে উন্নয়ন ও মাঠের পরিস্থিতি সমুন্নত থাকবে। আমরা আমদানিনির্ভর না হয়ে কৃষিনির্ভর বাংলাদেশ দেখতে চাই। দেশের সমৃদ্ধি ও সচ্ছলতার জন্য বিষয়টি জরুরি।
অনিয়ম-দুর্নীতি অঙ্কুরেই বিনষ্ট করার পদ্ধতি চালু করতে হবে। দুরাচার-দুঃশাসনের কণ্ঠরোধ হবে স্বয়ংক্রিয়ভাবে। ক্ষমতার অপব্যবহার ও স্বেচ্ছাচারিতার সুযোগই থাকবে না। সুষ্ঠু ধারায় দেশকে এগিয়ে নিতে, জাতিকে মননে-মেধায়-চর্চায় সত্যিকার অর্থে গণতন্ত্রের প্রতি শ্রদ্ধাশীল করে তুলতে হবে। না হলে বারবার সরকার বদলে ‘গরম কড়াই থেকে জ্বলন্ত চুলায়’ পড়ার অবস্থা তৈরি হবে।
আশা করি, অন্তর্র্বতী সরকারের প্রধান লক্ষ্য হবে রাষ্ট্রের সংস্কার। এর মাধ্যমে এমন একটি জবাবদিহিমূলক ব্যবস্থা গড়ে তোলা সম্ভব হবে, যেখানে সরকার বদল হলেও দেশে তার কোনো নেতিবাচক প্রভাব পড়বে না। দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনাসহ রাষ্ট্র সংস্কার করলে সমতাভিত্তিক দেশ গড়া সম্ভব হবে। যে যায় লঙ্কায়, সে হয় রাবণ এ সিস্টেম বদল করতে হবে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি সমুন্নত রাখতে হবে। নতুন বাংলাদেশকে স্বাবলম্বী হিসেবে দেখতে চাই। সমাজ ও রাষ্ট্রের রন্ধ্রে রন্ধ্রে ঢুকে যাওয়া দুর্নীতির অবসান দেখতে চাই। সমাজ থেকে সব ধরনের বৈষম্য-অনাচার-অবিচার, দুরাচার-দুঃশাসন-দুর্নীতির মূলোৎপাটন করে লাষ্ট্রের সর্বস্তরে ন্যায্যতা প্রতিষ্ঠা করতে হবে। তা হলেই দেশ এগিয়ে যাবে, মানুষের জীবনমান উন্নত হবে। অর্থনৈতিক মুক্তি মিলবে জাতির। এমন বাংলাদেশই আমরা দেখতে চাই।
ফারজানা ইসলাম: কবি ও সামাজিক উদ্যোক্তা।
শিরোনাম :
ফারজানা ইসলাম || কেমন বাংলাদেশ দেখতে চাই
পঠিত