ঢাকা ০৩:০০ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২২ মে ২০২৫, ৮ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

পলক রহমান এর ছোট গল্প || ক্যারিয়ার ও সংসার

  • আপ : ০৪:১১:১২ অপরাহ্ন, সোমবার, ১০ জুন ২০২৪
  • ৪৫০ ভিউ :

 

স্বপ্নার জীবনে কখনও প্রেম আসেনি। স্বপ্না নিজেও ভাবে এ বিষয়টা নিয়ে। ভাবে- আসলেই কি তার জীবনে কোনদিন কোন প্রেম আসেনি? তাহলে ফয়সল, মারুফ, জয় এদেরকে ভালো লাগত কেন তার? ওদের মধ্যে ফয়সলকে তো একটু বেশীই ভালো লাগত। সে কথা অকপটেই স্বীকার করত সে। বন্ধুরাও এ নিয়ে টিপ্পুনি কাটতে ছাড়ত না।

আসলে পড়ালেখায় সিরিয়াস হতে গিয়ে প্রেমের বিষয়টা নিয়ে ভাব্বারই সময় হয়নি স্বপ্নার। তা ছাড়া বন্ধুদের সাথে প্রেম কি ভাবে করতে হয়, কারও সাথে প্রেম হল কি না, প্রেম হয়ে গেলে প্রেমিকের আচরণে কেমন পরিবর্তন হয় এ সবও সে বুঝে না। তবে এঁচড়ে পাকা বন্ধুদের কাছে কখনও কোন আড্ডায় বসার ফুরসত হলে শুনেছে- প্রেমে পড়লে নাকি হঠাৎ জোড়া পাখি, সন্ধ্যার আকাশ, রাতের শিউলি ঝরা ফুল দেখতে ভালো লাগে। মনের আঙিনায় ফুরফুরে বসন্ত বাতাস খেলা করে। গান কবিতা শুনতে খুব ভালো লাগে। মুরুব্বীদের সামনে নিজেকে কেমন বোকা বোকা লাগে, ভয় এসে জড়িয়ে থাকে সারা শরীরে পাছে জানাজানি হয়ে যায় মুকুলিত প্রেমের কথা।

স্বপ্নার মনে পড়ে একবার ফয়সলের জন্য তার মনে এমন পরিবর্তন দেখা দিয়েছিল। ক’দিন এ নিয়ে ভাবতেই এক বিসিএস ক্যাডারের মেজিট্রেট ছেলের সাথে বিয়ের সমন্ধ এলো । দেখতে এসে হঠাত করে ছেলেটার সাথে বিয়েও হয়ে গেল। বিয়েতে মত অমতের কোন একটা বিষয় থাকে। আসলে বিয়ে, সংসার বাচ্চা কাচ্চা, এ সব নিয়ে স্বপ্নার মনে তখনও কোন স্বপ্নই দানা বাধেনি। সবে ডাক্তারী পাশ করেছে। একটা কেরিয়ার ডেভলপ করা নিয়ে সে পরিকল্পনা করছে কেবল। আর তখনই এমন ঘটনা। কিছু বুঝে উঠার আগেই বিয়ে তারপর সংসার সেটাকে মেনে নিতে পারেনি স্বপ্না। তাই কিছু বুঝে উঠার আগে সেই একই বিপত্তি ঘটল। শেষমেশ বিয়েটা আর টিকল না। এর জন্য সে কাকে দোষ দেবে ভেবেও পায় না।

স্বপ্নার মনে পড়ে না এখন যে এ বিয়েতে তার মত ছিল কি না, এ নিয়ে তাকে কেউ জিজ্ঞাসা করেছিল কি না। স্বপ্নার এটাই একটা সমস্যা সব কিছুই কেমন যেন দেরীতে হয়। এখন মনে পড়ছে সেও তো বলতে পারত যে সে বিয়ে করার জন্য প্রস্তুত নয়। এখন সে বিয়ে করবে না। কিন্তু বলতে পারেনি। তা হোক কিন্তু সে বিয়েটা যদি ভালো হত তাও সহ্য করা যায়, কিন্তু ভালো আর হয় না। তাহলে এই এত লেখাপড়ায় ভালো হয়ে ডাক্তার হয়ে লাভ হয়েছে কি তার? স্বপ্না ভাবে তার ভেতরে তার আর দশটা বান্ধবীদের মত বিয়ে, স্বামী সংসার, বাচ্চা-কাচ্চা, শ্বশুর-শ্বাশুড়ি এ সব নিয়ে কেমন করে একটা অন্য জীবনে প্রবেশ করতে হয় সেটা এখনও কেমন অগুছালো। এটা যে ইচ্ছে করে হয় তা না। সে বুঝতেও পারে না সংসারের জন্য সে কতখানি নিবেদিত। স্বামী আছে সে তার মত আছেই তো, তাকে আবার দেখে রাখার কি আছে! এ বিষয়টা তার কাছে ফানি মনে হত।

শহুরে ফ্ল্যাটে জানালা ঘেঁষে খাটের উপরে বসে দূরের ন্যাকামো বর্ষার খামখেয়ালি আচরণ দেখার সুজোগ কই? আর ফ্ল্যাটে বারান্দা বলতে যেটা থাকে সেটা তো আর বারান্দা নয় কাপড় শুকানো আর অতি প্রয়োজনীয় মনে করা কতগুলো বাতিল সংসারি সামগ্রীর স্টোর হয়ে যায় সেটা। কেউ কেউ ভালোবেসে টবে লাগানো বিভিন্ন ফুল গাছের সাথে সখ্যতা গড়ে তুলতে চায়। বিড়াল অথবা পাখি পোষে। নেহায়েত সেটা কম। আজকাল বাড়তি ঝামেলা হাতে নেয়ার সময় কারও নেই। স্বপ্নার এমন শখের কোনটাই হয় না। তবে সে যেখানে থাকে সে ফ্ল্যাটের বারান্দা তার খুব প্রিয় একটা জায়গা। ডাক্তারি প্রাক্টিস সেরে বাসায় ফিরে নিজের জন্য সাংসারিক কাজ সেরে একটু অবসর পেলে কিংবা মনটা একটু খারাপ হলেই ঝোলা বারান্দাটায় এসে বসে। দূর আকাশের দিকে চেয়ে থাকে। তখন আকাশে মেঘ বৃষ্টি থাকলে তো কথাই নেই। আর রাত্রি মানেই চাঁদ আর তার কোলের জোস্নার সাথে কথা বলা। নৈলে তারার আকাশে চোখ মেলে দিয়ে দূরের সংগীতে কান রাখা।

আজ ঘটা করেই এক কাপ কফি হাতে ঐ বারান্দায় বসে সে জীবনের আর একটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেয়ার বিষয়টি নিয়ে ভাবতে বসেছে। মানে তাকে ভাবতে হোচ্ছে। কঠিন সিদ্ধান্ত। সেটা তাকেই নিতে হবে। আকাশে তখন হাল্কা বিদ্যুৎ চমকাচ্ছে, বৃষ্টি হোচ্ছে, বাতাসের ঝাপটায় বৃষ্টির পানি মাঝে মাঝে চোখ মুখে আদ্রতার আদর মাখাচ্ছে। স্বপ্নার সেদিকে খেয়াল নেই। কারন তার মনের ভেতরে তখন যে ঝড় বইছে তা সব কিছুর থেকেও তীব্র। পএয়ালার কফিও জুড়িয়ে এসেছে। আজ তার একটিই ভাবনা এবার বিয়েটা হলে সে তার নিজের সংসারে মা, বোন, বান্ধবি কাউকে কক্ষনও নাক গলাতে দেবে না। সংসার সুন্দর করে সাজানোর জন্য ব্যক্তিগত ক্যারিয়ার, উচ্চ শিক্ষা, নেট ওয়ার্কিং এ সব সংসারের বাইরেই রাখবে সে। সংগীটির সাথে ভালো মন্দ বুঝা পড়া করে নিজেদের সংসার নিজেরাই সুন্দর করে গড়ে তুলবে। সেপারেশন জীবন টেনে নিয়ে বেড়াতে বেড়াতে একটা ব্যাপার সে খুব বুঝতে পেরেছে। এখন সে বুঝে সংসার ঠিক মত করা একটি ধর্মতুল্য কাজ, একটি অবস্থানগত কিছু মানুষকে আপন করার সাধনা, একটা অনাগত প্রজন্মের সুষ্ঠু পরিকল্পনা করার জন্য রেখে যাওয়া আপন অস্তিত্ব। যেখানে থাকবে প্রেম-ভালোবাসা, মান-অভিমান, হাসি-কান্না, অভাব-অনটন, শ্রদ্ধা-স্নেহ-সম্মান এর সব কিছুই। শিক্ষা ও পেশগত ক্যারিয়ারের বাইরে এ সব কিছুকে নিয়েই আগলে রাখতে হয় সেই সুখের সংসারটি।

০৯ জুন, ২০২৪।

পলক রহমান এর ছোট গল্প || ক্যারিয়ার ও সংসার

আপ : ০৪:১১:১২ অপরাহ্ন, সোমবার, ১০ জুন ২০২৪

 

স্বপ্নার জীবনে কখনও প্রেম আসেনি। স্বপ্না নিজেও ভাবে এ বিষয়টা নিয়ে। ভাবে- আসলেই কি তার জীবনে কোনদিন কোন প্রেম আসেনি? তাহলে ফয়সল, মারুফ, জয় এদেরকে ভালো লাগত কেন তার? ওদের মধ্যে ফয়সলকে তো একটু বেশীই ভালো লাগত। সে কথা অকপটেই স্বীকার করত সে। বন্ধুরাও এ নিয়ে টিপ্পুনি কাটতে ছাড়ত না।

আসলে পড়ালেখায় সিরিয়াস হতে গিয়ে প্রেমের বিষয়টা নিয়ে ভাব্বারই সময় হয়নি স্বপ্নার। তা ছাড়া বন্ধুদের সাথে প্রেম কি ভাবে করতে হয়, কারও সাথে প্রেম হল কি না, প্রেম হয়ে গেলে প্রেমিকের আচরণে কেমন পরিবর্তন হয় এ সবও সে বুঝে না। তবে এঁচড়ে পাকা বন্ধুদের কাছে কখনও কোন আড্ডায় বসার ফুরসত হলে শুনেছে- প্রেমে পড়লে নাকি হঠাৎ জোড়া পাখি, সন্ধ্যার আকাশ, রাতের শিউলি ঝরা ফুল দেখতে ভালো লাগে। মনের আঙিনায় ফুরফুরে বসন্ত বাতাস খেলা করে। গান কবিতা শুনতে খুব ভালো লাগে। মুরুব্বীদের সামনে নিজেকে কেমন বোকা বোকা লাগে, ভয় এসে জড়িয়ে থাকে সারা শরীরে পাছে জানাজানি হয়ে যায় মুকুলিত প্রেমের কথা।

স্বপ্নার মনে পড়ে একবার ফয়সলের জন্য তার মনে এমন পরিবর্তন দেখা দিয়েছিল। ক’দিন এ নিয়ে ভাবতেই এক বিসিএস ক্যাডারের মেজিট্রেট ছেলের সাথে বিয়ের সমন্ধ এলো । দেখতে এসে হঠাত করে ছেলেটার সাথে বিয়েও হয়ে গেল। বিয়েতে মত অমতের কোন একটা বিষয় থাকে। আসলে বিয়ে, সংসার বাচ্চা কাচ্চা, এ সব নিয়ে স্বপ্নার মনে তখনও কোন স্বপ্নই দানা বাধেনি। সবে ডাক্তারী পাশ করেছে। একটা কেরিয়ার ডেভলপ করা নিয়ে সে পরিকল্পনা করছে কেবল। আর তখনই এমন ঘটনা। কিছু বুঝে উঠার আগেই বিয়ে তারপর সংসার সেটাকে মেনে নিতে পারেনি স্বপ্না। তাই কিছু বুঝে উঠার আগে সেই একই বিপত্তি ঘটল। শেষমেশ বিয়েটা আর টিকল না। এর জন্য সে কাকে দোষ দেবে ভেবেও পায় না।

স্বপ্নার মনে পড়ে না এখন যে এ বিয়েতে তার মত ছিল কি না, এ নিয়ে তাকে কেউ জিজ্ঞাসা করেছিল কি না। স্বপ্নার এটাই একটা সমস্যা সব কিছুই কেমন যেন দেরীতে হয়। এখন মনে পড়ছে সেও তো বলতে পারত যে সে বিয়ে করার জন্য প্রস্তুত নয়। এখন সে বিয়ে করবে না। কিন্তু বলতে পারেনি। তা হোক কিন্তু সে বিয়েটা যদি ভালো হত তাও সহ্য করা যায়, কিন্তু ভালো আর হয় না। তাহলে এই এত লেখাপড়ায় ভালো হয়ে ডাক্তার হয়ে লাভ হয়েছে কি তার? স্বপ্না ভাবে তার ভেতরে তার আর দশটা বান্ধবীদের মত বিয়ে, স্বামী সংসার, বাচ্চা-কাচ্চা, শ্বশুর-শ্বাশুড়ি এ সব নিয়ে কেমন করে একটা অন্য জীবনে প্রবেশ করতে হয় সেটা এখনও কেমন অগুছালো। এটা যে ইচ্ছে করে হয় তা না। সে বুঝতেও পারে না সংসারের জন্য সে কতখানি নিবেদিত। স্বামী আছে সে তার মত আছেই তো, তাকে আবার দেখে রাখার কি আছে! এ বিষয়টা তার কাছে ফানি মনে হত।

শহুরে ফ্ল্যাটে জানালা ঘেঁষে খাটের উপরে বসে দূরের ন্যাকামো বর্ষার খামখেয়ালি আচরণ দেখার সুজোগ কই? আর ফ্ল্যাটে বারান্দা বলতে যেটা থাকে সেটা তো আর বারান্দা নয় কাপড় শুকানো আর অতি প্রয়োজনীয় মনে করা কতগুলো বাতিল সংসারি সামগ্রীর স্টোর হয়ে যায় সেটা। কেউ কেউ ভালোবেসে টবে লাগানো বিভিন্ন ফুল গাছের সাথে সখ্যতা গড়ে তুলতে চায়। বিড়াল অথবা পাখি পোষে। নেহায়েত সেটা কম। আজকাল বাড়তি ঝামেলা হাতে নেয়ার সময় কারও নেই। স্বপ্নার এমন শখের কোনটাই হয় না। তবে সে যেখানে থাকে সে ফ্ল্যাটের বারান্দা তার খুব প্রিয় একটা জায়গা। ডাক্তারি প্রাক্টিস সেরে বাসায় ফিরে নিজের জন্য সাংসারিক কাজ সেরে একটু অবসর পেলে কিংবা মনটা একটু খারাপ হলেই ঝোলা বারান্দাটায় এসে বসে। দূর আকাশের দিকে চেয়ে থাকে। তখন আকাশে মেঘ বৃষ্টি থাকলে তো কথাই নেই। আর রাত্রি মানেই চাঁদ আর তার কোলের জোস্নার সাথে কথা বলা। নৈলে তারার আকাশে চোখ মেলে দিয়ে দূরের সংগীতে কান রাখা।

আজ ঘটা করেই এক কাপ কফি হাতে ঐ বারান্দায় বসে সে জীবনের আর একটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেয়ার বিষয়টি নিয়ে ভাবতে বসেছে। মানে তাকে ভাবতে হোচ্ছে। কঠিন সিদ্ধান্ত। সেটা তাকেই নিতে হবে। আকাশে তখন হাল্কা বিদ্যুৎ চমকাচ্ছে, বৃষ্টি হোচ্ছে, বাতাসের ঝাপটায় বৃষ্টির পানি মাঝে মাঝে চোখ মুখে আদ্রতার আদর মাখাচ্ছে। স্বপ্নার সেদিকে খেয়াল নেই। কারন তার মনের ভেতরে তখন যে ঝড় বইছে তা সব কিছুর থেকেও তীব্র। পএয়ালার কফিও জুড়িয়ে এসেছে। আজ তার একটিই ভাবনা এবার বিয়েটা হলে সে তার নিজের সংসারে মা, বোন, বান্ধবি কাউকে কক্ষনও নাক গলাতে দেবে না। সংসার সুন্দর করে সাজানোর জন্য ব্যক্তিগত ক্যারিয়ার, উচ্চ শিক্ষা, নেট ওয়ার্কিং এ সব সংসারের বাইরেই রাখবে সে। সংগীটির সাথে ভালো মন্দ বুঝা পড়া করে নিজেদের সংসার নিজেরাই সুন্দর করে গড়ে তুলবে। সেপারেশন জীবন টেনে নিয়ে বেড়াতে বেড়াতে একটা ব্যাপার সে খুব বুঝতে পেরেছে। এখন সে বুঝে সংসার ঠিক মত করা একটি ধর্মতুল্য কাজ, একটি অবস্থানগত কিছু মানুষকে আপন করার সাধনা, একটা অনাগত প্রজন্মের সুষ্ঠু পরিকল্পনা করার জন্য রেখে যাওয়া আপন অস্তিত্ব। যেখানে থাকবে প্রেম-ভালোবাসা, মান-অভিমান, হাসি-কান্না, অভাব-অনটন, শ্রদ্ধা-স্নেহ-সম্মান এর সব কিছুই। শিক্ষা ও পেশগত ক্যারিয়ারের বাইরে এ সব কিছুকে নিয়েই আগলে রাখতে হয় সেই সুখের সংসারটি।

০৯ জুন, ২০২৪।