ক’দিন ধরে খুব শঙ্কায় আছি। ভাবতে ভাবতে যেন অসুস্থও হয়ে পড়ছি। বয়সও বেড়েছে। ষাট এর দশক থেকে কতকিছুই তো দেখলাম, পড়লাম, শুনলাম, মুখ বুঁজে সহ্য করলাম। কিন্তু এবার হয়ত সহ্য করতে না পেরে পটলই তুলতে হবে। বলছিলাম কি- অল্প ক’দিন আগেই বিগত ফ্যাসিস্ট সরকারের কয়েক দশকের ভাঙ্গারেকর্ডের প্যানপ্যানানি আর লুটতরাজটা রক্তপাতের মাধ্যমে সংগ্রামী ছাত্র-জনতার প্যাদানি খেয়ে সাঙ্গ হল। কি অসহ্য!
★★ কিন্তু ইদানিং মনে হোচ্ছ ২০২৪ এ এই নব্য পট পরিবর্তনে আবার মুদ্রার ওপীঠের ভাঙ্গা রেকর্ড “এ-আই” তে নিয়ে নতুন করে কিছু পুরোনো শব্দ, বাক্য, তথ্য, বাণী, প্যাঁচাল, বিশেষণ, ছবি ইত্যাদি স্যাঁটিয়ে মাঠে, ঘাটে, ময়দানে, সভায় সেমিনারে, চাটুকারিতার আড্ডায় কোন কোন নতুন এবং পুরাতন দলের দ্বারা আর এক প্যানপ্যানানি শুনতে হবে। যার আলামত শুরু হয়ে গেছে ইতিমধ্যেই। দু:খ এখানেই। এই যেমন:
১/ বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম প্রবর্তন কি এবং কখন
২/ শ্রেষ্ঠ বাঙালি/বীর সন্তান কে এবং কেন
৩/ বাঙালি না বাঙলাদেশি কি ভাবে হল
৪/ স্বাধীনতার ঘোষক আর পাঠক কে
৫/ মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় কে বা কারা এগিয়ে
৬/ সূর্য সন্তানদের অনাকাঙ্ক্ষিত দৌরাত্ম্য ফসলের মাঠ থেকে প্রশাসন অবধি চলা
৭/ –ভবন/ ঘর সমাচারের নতুন অধ্যায় উন্মোচন হওয়া
৮/ ছবি, ভাস্কর্য, মুরাল ভাঙ্গা এবং নির্মানের প্রতিযোগিতা শুরুর অপেক্ষা করা
৯/ বক্তৃতা, সেমিনার, সভা, আড্ডায় আসল বিষয়ের গুরুত্বকে পাশ কাটিয়ে ৫ মিনিট ধরে
অযথা কতগুলো বস্তাপচা বিশেষণের কচকচানিতে কান ঝালাপালা করা
১০/ নতুন করে কোন পুরোনো বক্তৃতার রেকর্ড হাটে, ঘাটে, বাজারে, মোড়ে ময়দানে, ইউনিফর্ম ছাউনি ও ব্যারাকে বড় বড় এলইডি স্ক্রীনে আবার দিন রাত্রি বছর বছর প্রচার এবং তার অত্যাচার শুরুর অপেক্ষা
১১/ নতুন করে কিছু দিবস পালন, পুরোনো কিছু দিবস বর্জন ও আয়োজন নিয়ে হট্টগোল, টেবিল চাপড়ানি, হর্ণ মাইকে চিতকার, ঝনঝনানি শুরু হওয়া
১২/ টোল, চাঁদাবাজি, রাহাজানি, মোটা দাগের ঘুষখোরের জন্ম, সেতু/খাম্বা ছেড়ে নতুন করে বাঁধ আর বাঁধ ভাঙ্গা পানি নিয়ে হরিলুটের কচ-কচলানি
১৩/ ইলেকশনে জেতা সংখ্যাগরিষ্ঠ কোন রাজনৈতিক দল সরকার গঠন করলে আবার হয়ত দেখব সে দলের চাটুকারিতায় অতি উৎসাহিত কিছু দল/উপদল, পার্শ্বদল/পাতিদল/নাতিদল/খ্যাতিদল থেকে শুরু করে এবার বুয়া ও বারবনিতারাও সংশ্লিষ্ট রাজনৈতিক দলের মদদপুষ্ট হয়ে লেডিদল তৈরি ও দৌরাত্ম্য প্রদর্শন শুরু করা
১৪/ এই সব পাতিনেতাদের ব্যনারে অযথা মনগড়া, অনুমুতিহীন, দৃষ্টিকটু এক কোনায় নেতা-নেত্রী-সন্তানদের ছবির সাথে নিজের ছবি বড় বড় করে ছাপিয়ে শুভেচ্ছা বিনিময়ের ব্যানারে ব্যানারে সড়ক আইল্যান্ড দখলের মহড়া
★★ সদ্য ২০২৪ শে স্বাধীনতার পরে অতি উৎসাহিত কিছু নব্য ও ক্ষতবিক্ষত স্বঘোষিত বুদ্ধিজীবীদের কিছু নতুন নতুন সংযোজনে এবার যে কি হবে লেজে গোবরে, তা ভেবে এই মূর্খ জ্ঞান হারাচ্ছে প্রতিদিন। এই যেমন:
১/ জাতীয় সংগীত ও স্বাধীনতা দিবসের পরিবর্তন
২/ পুলিশের নাম, পোষাক, স্থাপনার নাম পরিবর্তন
৩/ জাতীয় ফুল, পাখী/ ফল, ঢেকী # মাছ, মাছি/পোষাক, কাছি # হাড়ি- পাতিল/ বদনা, ঢিল ইত্যাদি কোনটা হবে ইত্যাদি?
★★সবচাইতে দু:খ লাগে আমরা কেউই আমাদের অর্থাৎ এই ব-দ্বীপের বাঙালিদের ধৈর্যগুন, আবেগ/ সহ্যগুন, বিবেক, পছন্দ, অপছন্দ, চাওয়া পাওয়া, ভালোবাসা, ঘৃণা, দ্রোহ ইত্যাদির বিষয়গুলো নিজেদের আধিপত্য বিস্তার করতে গিয়ে উপেক্ষা করি। এতে যে হিতে বিপরিত হয় তা ইতিহাস বার বার প্রমান করেছে। তবুও ক্ষমতার লোভে, দম্ভে, স্থায়ীকরণে, অবৈধতাকে বৈধ করতে গিয়ে ভুলেই যাই। শেষে জনগনের মনে এবং মর্যাদার জায়গাটাতে ছুরি বসিয়ে দেয়া হয়। ★★ মানুষের ভুল ভ্রান্তি থাকবেই। কতটুকু খারাপ ছিল বা ভুল ছিল সে নিয়ে তফছরা করলেও আমরা কি কেউ অস্বীকার করতে পারব- বঙ্গবন্ধুর সম্মান, অবদান এবং বাঙালি জাতিকে পরাধীনতা থেকে মুক্তি করার দীর্ঘ প্রক্রিয়ায় তার ত্যাগ ও তিতিক্ষার কথা! অথচ তাঁকে এবং তাঁর মর্যাদাকে আজ কে ভূলুন্ঠিত করেছে? তারই ঔরসজাত কুলাঙ্গার ক্ষমতা লোভী লুটেরা স্বৈরাচারী সন্তান। এবং তা কিভাবে করেছে? বাঙালিদের সেন্টিমেন্টকে মূল্যায়ন না করে দিনের পর দিন, বছরের পর বছর তাঁর বিশ্বে সমাদ্রিত ঐতিহাসিক ভাষণ সময় অসময়ে অযথা যত্রতত্র প্রচার, অসহ্য আর বিরুক্তিকর পরিবেশ তৈরি করে যত্রতত্র তাঁর ভাস্কর্য, মুরাল তৈরি, তাঁর নামে বিভিন্ন জাতীয় ও গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনার নামকরণ করা, প্যাডে, পাঁচীলে পণ্য হিসেবে ব্যাবহার করা এবং তা করা হয়েছে সমষ্টিগত বাঙালিত্বের বাঙালি আবেগ আর সেন্টিমেন্টকে তোয়াক্কা না করেই।
★★ বাঙালি মাত্র আমরা প্রায় সবাই এমন অনাকাঙ্ক্ষিত অত্যাচার এবং চাপিয়ে দেয়া অনুশাসনের কথা জানি এবং বুঝি। কিন্তু মুখ ফুটে বলি না। এটাও বাঙালির একটা স্বভাব। যার ফলে সহ্য করতে করতে এক সময় তা আউট বার্স্ট হয়। তার ফলশ্রুতিতে প্রতিবার আমরা স্বাধীনতার উন্মাদনায় উন্নয়নের ধারায় পিছিয়ে যাই। এই যেমন, ‘৭৫, ‘৭৮, ‘৮১, ‘৯০, ‘২০০৭ এবং সদ্য ‘২০২৪ শেও আমরা যেন স্বাধীন হলাম। অথচ স্বাধীন জাতি হিসেবে এমনটা কখনই কাম্য নয়।
★★ অনেকে বলে সময়মত চোখে আঙুল দেখিয়ে বলা হয়না বলেই আমাদেরকে যেন প্রতি ৫, ৭, ১০, ১২, ১৪, ১৬ বছর পর পর আন্দোলন, রক্ত, মৃত্যু, আগুন, কান্না, ধ্বংসের মধ্য দিয়ে স্বাধীনতায় ফিরে আসতে হয়। এমনটা হবে কেন? এটার পুনরাবৃত্তি হোক আর চাই না। এ থেকে মাতৃভূমি প্রান বাঙালিদের বেরিয়ে আসতে হবে। সরকার এ কারনেই আজ বাক এবং সংবাদপত্রের স্বাধীনতায় বিশ্বাসী।
★★ আগামীতে যে দলই সরকার গঠন করুক না কেন, তারা যেন বাঙালিদের সকল সেন্টিমেন্টগুলোর প্রতি যত্ন ও সতর্কতার সাথে শ্রদ্ধাশীল থাকে এবং বিগত ইতিহাস থেকে শিক্ষা নেয়।
০৫ সেপ্টেম্বর, ২০২৪।