ঢাকা ০৬:১৯ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৪ জুলাই ২০২৫, ৩০ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

কবিতা সম্ভবত টিকে যাবে, নতুন কোন শর্তে, নতুন কোন ভিতে

  • আপ : ০২:৫৬:৩৬ অপরাহ্ন, বুধবার, ৪ জুন ২০২৫
  • ১৪৩ ভিউ :

“কবিতা সম্ভবত টিকে যাবে, নতুন কোন শর্তে, নতুন কোন ভিতে”

জাতীয় কবিতা পরিষদের সভাপতি কবি মোহন রায়হানের সভাপতিত্বে পরিষদের নিয়মিত আয়োজন সাপ্তাহিক ‘কবিতাপাঠ ও আলোচনা’ অনুষ্ঠানের ৩৩ তম পর্ব গতকাল ০৩ জুন, মঙ্গলবার, বিকাল ৪টায় সাওল হার্ট সেন্টার-এর ‘কাজল মিলনায়তন’-এ অনুষ্ঠিত হয়েছে।
“আধুনিক কবিতার ভাষা ও কাঠামো” প্রসঙ্গে আলোচনা করেন, ‘বেঙ্গল হিস্টরিকাল কালেক্টিভ (বেহিকা)’র সমন্বয়ক, বিশিষ্ট লেখক ও সাংবাদিক তাহমিদাল জামি।
আধুনিক কবিতার ভাষা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, পুরাতন যুগে কবিদের পাথেয় ছিল রাজসভার পৃষ্ঠপোষকতা, দৈব প্রেরণা অথবা নিগূঢ় ধর্মাশ্রয়ী ভাব ও রসের প্রকাশ। ফলে পয়ার বা লাচারীর মতো সুনির্দিষ্ট ছন্দ, সান্ধ্যভাষা বা ব্রজবুলির মতো গোষ্ঠীকেন্দ্রিক মেকি ভাষা ইত্যাদির কাঠামো মেনেই কবি তার রসিক সুধীজনের পাঠে ও আমপাঠকের কানে-প্রাণে বরিত হতেন। মাইকেল  মধুসূদন, বঙ্কিমচন্দ্র, রবীন্দ্রনাথ প্রমুখ ঔপনিবেশিক  সময়ের শুরুতে সাহিত্যের আধুনিকতা নিয়ে আসেন। বাংলা  কবিতা চর্যাপদ থেকেই লিরিকাল। মহাকাব্য, গীতিকাব্য পেরিয়ে এখন আধুনিক কবিতার সময়। কল্পনা থেকে আসা স্বগত উচ্চারণ যে কবিতা, গোড়া থেকেই তার হৃদয়ে একটা কূটাভাস জারি ছিল। ব্যক্তিকবির সার্বভৌম কল্পনার দাবির মুখোমুখি হল উপনিবেশিক বাস্তবতার পেষণ, পুঁজিবাদের শতভগ্ন বিচূর্ণ বাস্তবতা, গণঅভ্যুত্থান ও মুক্তিযুদ্ধের এপিক প্রেরণা। একারণে বাংলাদেশের কবিতায় এন্টিলিরিক বা প্রতিগীতিকবিতার ধারা ছিল মজবুত। কটাক্ষ, স্লোগান, লিপ্ততা ইত্যাদির কোলাহলে এই লিরিকের শরীরে সার্বভৌম ব্যক্তির অভিমান ফেটে বহুস্বর জারি হল। আধুনিক, উত্তরাধুনিক বা দশকওয়ারি নান্দনিক ভঙ্গিসর্বস্বতা ও কেতাদুরস্তি দিয়ে এই কূটাভাস উপলব্ধি করা মুশকিল। আধুনিক, উত্তরাধুনিক বা দশকওয়ারি নান্দনিক ভঙ্গিসর্বস্বতা ও কেতাদুরস্তি দিয়ে এই কূটাভাস উপলব্ধি করা মুশকিল। আখেরি পুঁজিবাদের যে বাস্তবতায় আমরা আজ বসবাস করছি, সেখানে একদিকে যেমন জলবায়ু বিপর্যয় ও প্রাণ-প্রকৃতির গ্রহব্যাপী সংকটের দরুন বুর্জোয়া ব্যক্তিসত্তার শেষ খোলসের গোমরও ফাঁক হয়ে গেছে, তেমনি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার অনিঃশেষ যান্ত্রিক বাচালতা এসে কবিতা উৎপাদনের সাবজেক্টিভ ভিত্তি আকারে মানবীয় অভিজ্ঞতা ও কল্পনার কেন্দ্রিকতাকে দিচ্ছে হটিয়ে। শিল্পের যে জানাযা হেগেল পাঠ করেছিলেন, আজ আবার সে জানাযা পড়ার ডাক কেউ কেউ দিতে পারেন বটে। তবে কবিতা সম্ভবত টিকে যাবে, নতুন কোন শর্তে, নতুন কোন ভিতে।”
কবিতাপাঠ পর্বে পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রেজাউদ্দিন স্টালিনসহ বেশ ক’জন কবি পঠিত প্রবন্ধের উপর আলোচনা করেন। কবিতা পাঠের মধ্যখানে উপস্থিত কবিদের মধুমাসের ফল, সিঙ্গারা, কেক ও চা দিয়ে আপ্যায়িত করা হয়।
অনুষ্ঠানে  স্বরচিত কবিতা পাঠ করেন–কবি মোহন রায়হান, কবি রেজাউদ্দিন স্টালিন, কবি কামার ফরিদ, কবি মনজুরুর রহমান, কবি শাহীন রেজা, কবি শ্যামল জাকারিয়া, কবি এবিএম সোহেল রশিদ, কবি ইউসুফ রেজা, কবি আসাদ কাজল, কবি রফিক হাসান, কবি শাহীন চৌধুরী, কবি ক্যামেলিয়া আহমেদ, কবি রোকন জোহুর, কবি জামিল জাহাঙ্গীর, কবি মালিহা পারভীন, কবি তারিফ রহমান, কবি শহীদ আজাদ, কবি আতিকুল ইসলাম,  কবি শিমুল পারভীন, কবি মনিরুজ্জামান রোহান, কবি সবুজ মনির, কবি মোঃ রবিউল হোসেন, কবি আফিয়া রুবি, কবি রাসেল আহম্মেদ, কবি জুয়েল এনামুল, কবি আলী সারওয়ার পথফুল, কবি তাসকিনা ইয়াসমিন, কবি মোঃ আব্দুল হাই, কবি সেলিম রেজা বাচ্চু, কবি মরিয়ম আক্তার, কবি কায়কোবাদ, কবি মুহাম্মদ শামসুল হক বাবু, কবি ইউনুছ আলী, কবি প্রভাবতী চক্রবর্তী, কবি শেখ এ শাঈদ ফারসী, কবি মোহাম্মদ রবিউল হোসেন, কবি দেলোয়ারা ইয়াসমিন, কবি মোহাম্মদ সফিউল আলম, কবি আফরোজা খানম, রাসেল আহমেদ, কবি প্রভাবতী  চক্রবর্তী, কবি আশরাফুল ইসলাম, কবি শাহজাদা সেলিম, কবি অমৃত তরফদার অমিত প্রমুখ।
আগামী মঙ্গলবার, পবিত্র ঈদ উল আজহার কারণে কবিতাপাঠ ও আলোচনা অনুষ্ঠান হবে না। পরবর্তী মঙ্গলবার, ১৭ জুন  ইস্কাটন গার্ডেন রোডের সাওল হার্ট সেন্টারের “কাজল মিলনায়তন”-এ ৩৪তম কবিতাপাঠ ও আলোচনা অনুষ্ঠিত হবে।

কবিতা সম্ভবত টিকে যাবে, নতুন কোন শর্তে, নতুন কোন ভিতে

আপ : ০২:৫৬:৩৬ অপরাহ্ন, বুধবার, ৪ জুন ২০২৫

“কবিতা সম্ভবত টিকে যাবে, নতুন কোন শর্তে, নতুন কোন ভিতে”

জাতীয় কবিতা পরিষদের সভাপতি কবি মোহন রায়হানের সভাপতিত্বে পরিষদের নিয়মিত আয়োজন সাপ্তাহিক ‘কবিতাপাঠ ও আলোচনা’ অনুষ্ঠানের ৩৩ তম পর্ব গতকাল ০৩ জুন, মঙ্গলবার, বিকাল ৪টায় সাওল হার্ট সেন্টার-এর ‘কাজল মিলনায়তন’-এ অনুষ্ঠিত হয়েছে।
“আধুনিক কবিতার ভাষা ও কাঠামো” প্রসঙ্গে আলোচনা করেন, ‘বেঙ্গল হিস্টরিকাল কালেক্টিভ (বেহিকা)’র সমন্বয়ক, বিশিষ্ট লেখক ও সাংবাদিক তাহমিদাল জামি।
আধুনিক কবিতার ভাষা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, পুরাতন যুগে কবিদের পাথেয় ছিল রাজসভার পৃষ্ঠপোষকতা, দৈব প্রেরণা অথবা নিগূঢ় ধর্মাশ্রয়ী ভাব ও রসের প্রকাশ। ফলে পয়ার বা লাচারীর মতো সুনির্দিষ্ট ছন্দ, সান্ধ্যভাষা বা ব্রজবুলির মতো গোষ্ঠীকেন্দ্রিক মেকি ভাষা ইত্যাদির কাঠামো মেনেই কবি তার রসিক সুধীজনের পাঠে ও আমপাঠকের কানে-প্রাণে বরিত হতেন। মাইকেল  মধুসূদন, বঙ্কিমচন্দ্র, রবীন্দ্রনাথ প্রমুখ ঔপনিবেশিক  সময়ের শুরুতে সাহিত্যের আধুনিকতা নিয়ে আসেন। বাংলা  কবিতা চর্যাপদ থেকেই লিরিকাল। মহাকাব্য, গীতিকাব্য পেরিয়ে এখন আধুনিক কবিতার সময়। কল্পনা থেকে আসা স্বগত উচ্চারণ যে কবিতা, গোড়া থেকেই তার হৃদয়ে একটা কূটাভাস জারি ছিল। ব্যক্তিকবির সার্বভৌম কল্পনার দাবির মুখোমুখি হল উপনিবেশিক বাস্তবতার পেষণ, পুঁজিবাদের শতভগ্ন বিচূর্ণ বাস্তবতা, গণঅভ্যুত্থান ও মুক্তিযুদ্ধের এপিক প্রেরণা। একারণে বাংলাদেশের কবিতায় এন্টিলিরিক বা প্রতিগীতিকবিতার ধারা ছিল মজবুত। কটাক্ষ, স্লোগান, লিপ্ততা ইত্যাদির কোলাহলে এই লিরিকের শরীরে সার্বভৌম ব্যক্তির অভিমান ফেটে বহুস্বর জারি হল। আধুনিক, উত্তরাধুনিক বা দশকওয়ারি নান্দনিক ভঙ্গিসর্বস্বতা ও কেতাদুরস্তি দিয়ে এই কূটাভাস উপলব্ধি করা মুশকিল। আধুনিক, উত্তরাধুনিক বা দশকওয়ারি নান্দনিক ভঙ্গিসর্বস্বতা ও কেতাদুরস্তি দিয়ে এই কূটাভাস উপলব্ধি করা মুশকিল। আখেরি পুঁজিবাদের যে বাস্তবতায় আমরা আজ বসবাস করছি, সেখানে একদিকে যেমন জলবায়ু বিপর্যয় ও প্রাণ-প্রকৃতির গ্রহব্যাপী সংকটের দরুন বুর্জোয়া ব্যক্তিসত্তার শেষ খোলসের গোমরও ফাঁক হয়ে গেছে, তেমনি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার অনিঃশেষ যান্ত্রিক বাচালতা এসে কবিতা উৎপাদনের সাবজেক্টিভ ভিত্তি আকারে মানবীয় অভিজ্ঞতা ও কল্পনার কেন্দ্রিকতাকে দিচ্ছে হটিয়ে। শিল্পের যে জানাযা হেগেল পাঠ করেছিলেন, আজ আবার সে জানাযা পড়ার ডাক কেউ কেউ দিতে পারেন বটে। তবে কবিতা সম্ভবত টিকে যাবে, নতুন কোন শর্তে, নতুন কোন ভিতে।”
কবিতাপাঠ পর্বে পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রেজাউদ্দিন স্টালিনসহ বেশ ক’জন কবি পঠিত প্রবন্ধের উপর আলোচনা করেন। কবিতা পাঠের মধ্যখানে উপস্থিত কবিদের মধুমাসের ফল, সিঙ্গারা, কেক ও চা দিয়ে আপ্যায়িত করা হয়।
অনুষ্ঠানে  স্বরচিত কবিতা পাঠ করেন–কবি মোহন রায়হান, কবি রেজাউদ্দিন স্টালিন, কবি কামার ফরিদ, কবি মনজুরুর রহমান, কবি শাহীন রেজা, কবি শ্যামল জাকারিয়া, কবি এবিএম সোহেল রশিদ, কবি ইউসুফ রেজা, কবি আসাদ কাজল, কবি রফিক হাসান, কবি শাহীন চৌধুরী, কবি ক্যামেলিয়া আহমেদ, কবি রোকন জোহুর, কবি জামিল জাহাঙ্গীর, কবি মালিহা পারভীন, কবি তারিফ রহমান, কবি শহীদ আজাদ, কবি আতিকুল ইসলাম,  কবি শিমুল পারভীন, কবি মনিরুজ্জামান রোহান, কবি সবুজ মনির, কবি মোঃ রবিউল হোসেন, কবি আফিয়া রুবি, কবি রাসেল আহম্মেদ, কবি জুয়েল এনামুল, কবি আলী সারওয়ার পথফুল, কবি তাসকিনা ইয়াসমিন, কবি মোঃ আব্দুল হাই, কবি সেলিম রেজা বাচ্চু, কবি মরিয়ম আক্তার, কবি কায়কোবাদ, কবি মুহাম্মদ শামসুল হক বাবু, কবি ইউনুছ আলী, কবি প্রভাবতী চক্রবর্তী, কবি শেখ এ শাঈদ ফারসী, কবি মোহাম্মদ রবিউল হোসেন, কবি দেলোয়ারা ইয়াসমিন, কবি মোহাম্মদ সফিউল আলম, কবি আফরোজা খানম, রাসেল আহমেদ, কবি প্রভাবতী  চক্রবর্তী, কবি আশরাফুল ইসলাম, কবি শাহজাদা সেলিম, কবি অমৃত তরফদার অমিত প্রমুখ।
আগামী মঙ্গলবার, পবিত্র ঈদ উল আজহার কারণে কবিতাপাঠ ও আলোচনা অনুষ্ঠান হবে না। পরবর্তী মঙ্গলবার, ১৭ জুন  ইস্কাটন গার্ডেন রোডের সাওল হার্ট সেন্টারের “কাজল মিলনায়তন”-এ ৩৪তম কবিতাপাঠ ও আলোচনা অনুষ্ঠিত হবে।